ভারতের মতো দেশে ক্রিকেট অন্যতম আবেগের একটি জায়গা। ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতির মধ্যে এই খেলা ভারতবাসীদের একই মঞ্চে নিয়ে আসে। গতকাল এই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামে। নতুন করে ভারতকে আবার বিশ্ব সেরা করার লক্ষ্যে প্রতিটি ক্রিকেটার শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। বহুদিনের স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাসকে ছাড়িয়ে নতুন অধ্যায় লেখে ব্লু ব্রিগেডরা। এবার বল হাতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করার পর ম্যাচ শেষে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন হার্দিক পান্ডিয়া।
হার্দিক পান্ডিয়া ভারতের অন্যতম তারকা অলরাউন্ডার। তিনি গত বছর একদিনের বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট চলাকালীন চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। ফলে ভারতীয় দলকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে তিনি সাহায্য করতে পারেননি। এরপর আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে রোহিত শর্মাকে সরিয়ে অধিনায়ক হিসাবে ফিরে আসায় এই তারকা ক্রিকেটারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। প্রতিটি ম্যাচেই দর্শক আসন থেকে তার প্রতি বিদ্রুপ মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া হয়। আইপিএলে এতো চাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে হার্দিক পান্ডিয়া সেইভাবে নিজের পারফরমেন্স তুলে ধরতে পারেননি।
ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল বাছাইয়ের সময় অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ তাকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়ার কথাও তুলেছিলেন। কিন্তু গতকাল শেষ হওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের প্রথম থেকেই তিনি ব্লু ব্রিগ্রেডদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হয়েছে ব্যাট হাতে বা বল হাতে হার্দিক ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন। গতকাল ফাইনালেও যখন দক্ষিণ আফ্রিকার হেনরিক ক্লাসেন প্রায় ম্যাচটা নিজেদের দিকে করে নিয়েছিল সেই সময় হার্দিক পান্ডিয়া তার গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি তুলে নিয়ে ভারতীয় দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন।
এরপর শেষ ওভারে ডেভিড মিলারকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে এই ভারতীয় তারকা কফিনের শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন। ফলে গতকাল ভারতীয় দল ৭ রানে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস তৈরি করে। এরপরেই আবেগপ্রবণ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হার্দিক পান্ডিয়া। দীর্ঘ সময়ের সমালোচনার পর এইরকম রাজকীয়ভাবে ফিরে এসে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “ওই ছয় মাস আমার যেমনভাবে কেটেছে যা গেছে যা এসেছে সবকিছুর মধ্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে করেছিলাম।”
ভারতীয় তারকা অলরাউন্ডার আরও বলেন, “সেই সময় আমার কান্নায় ভেঙে পড়া উচিত ছিল কিন্তু আমি কাঁদিনি। আমি আমার কষ্ট কাউকেই দেখাতে চায়নি। যারা আমার জীবনের কঠিন সময় খুশি হচ্ছিল তাদের আরও আনন্দ দিতে চায়নি এবং কখনও এরম সুযোগ দেবো না। যেভাবে ৬ মাস যাওয়ার পর আবার নতুন করে শুরু হলো। ভগবানের কৃপা দেখুন আমি কেমন সুযোগ পেলাম। শেষ ওভারে বল করার সময় আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। কী বলবো আমি পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।” উল্লেখ্য এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অধিনায়ক রোহিত শর্মা এসে হার্দিক পান্ডিয়াকে জড়িয়ে ধরে গালে চুম্বন করেছিলেন।